২৪ জুন থেকে ফেডের চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল কংগ্রেসের সামনে দুই দিন ধরে ছয়মাসের জন্য মুদ্রানীতি সংক্রান্ত প্রতিবেদন তুলে ধরবেন। মঙ্গলবার তিনি সিনেট ব্যাংকিং কমিটির সামনে বক্তব্য দেবেন, আর বুধবার হাউজ ফিনান্সিয়াল সার্ভিসেস কমিটির সামনে বক্তব্য দেবেন।
বছরজুড়ে ফেডের চেয়ারম্যানের নির্ধারিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ ইভেন্ট থাকে (বৈঠক-পরবর্তী প্রেস কনফারেন্স বাদে), যেমন পর্তুগালের সিনত্রায় অর্থনৈতিক ফোরাম, জ্যাকসন হোলের আন্তর্জাতিক সিম্পোজিয়াম, এবং ইকোনমিক ক্লাব অব ওয়াশিংটনের আয়োজিত ইভেন্ট। এসব জায়গায় ফেডের চেয়ারম্যান অনেকটা স্বাধীনভাবে বক্তব্য দেন—যদিও তাকে প্রশ্ন করা হয়, তবে তিনি সেগুলো এড়িয়ে যেতে বা অস্পষ্টভাবে উত্তর দিতে পারেন। কিন্তু ছয়মাস পরপর কংগ্রেসের সামনে দেয়া বক্তব্য এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। এখানে আইনপ্রণেতারা সরাসরি প্রশ্ন করেন, যার ফলে পাওয়েলকে তুলনামূলকভাবে স্পষ্ট ও বিস্তারিতভাবে উত্তর দিতে হয়। এ কারণেই এই "দুই দিনের ম্যারাথন"-এর তাৎপর্য বেশি।
পাওয়েল কী বলবেন? এটি কি EUR/USD পেয়ারের মূল্যের অস্থিরতা সৃষ্টি করবে?
প্রথমে জুন মাসের FOMC-এর প্রেস কনফারেন্সে পাওয়েলের মূল বক্তব্যের কথা স্মরণ করি। এই বক্তব্যের প্রধান বার্তা ছিল: উচ্চমূল্যস্ফীতি। পাওয়েল বলেছিলেন, নতুন শুল্ক নীতির পূর্ণ প্রভাব স্পষ্ট না হওয়া পর্যন্ত ফেড সুদের হার কমানো থেকে বিরত থাকবে—বিশেষ করে আরোপিত শুল্ক মুদ্রাস্ফীতির উপর কতটা প্রভাব ফেলছে তা বোঝা জরুরি। ফেড তাদের সামষ্টিক অর্থনৈতিক পূর্বাভাস হালনাগাদ করেছে, যেখানে জিডিপি প্রবৃদ্ধির প্রত্যাশা কমানো হয়েছে, আর মূল্যস্ফীতি ও বেকারত্বের পূর্বাভাস বাড়ানো হয়েছে।
পাওয়েল ভবিষ্যতে সুদের হার কমানোর সিদ্ধান্তকে মুদ্রাস্ফীতির প্রবণতার সাথে "সংযুক্ত" করে দিয়েছেন, এবং বাণিজ্যনীতির অনিশ্চয়তা তুলে ধরেছেন—বিশেষ করে যেহেতু তথাকথিত "গ্রেস পিরিয়ড," যেখানে ১০% সমান হারে শুল্ক আরোপিত হচ্ছে, তা জুলাইয়ে শেষ হচ্ছে এবং তা স্বতন্ত্র শুল্কে রূপান্তরিত হবে।
এটাই ছিল জুনের FOMC-এর বৈঠকের মূল বার্তা, যার পর বিনিয়োগকারীরা ধরে নিয়েছে ফেড অন্তত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত 'অপেক্ষা ও পর্যবেক্ষণের' অবস্থান বজায় রাখবে। তবে পূর্বাভাস (ডট প্লট) অনুসারে বছর শেষের আগেই দুইবার সুদের হার কমানোর ইঙ্গিত রয়েছে।
পাওয়েল সম্ভবত এই সপ্তাহে কংগ্রেসের সামনে উপরের মূল বার্তাগুলোই পুনরাবৃত্তি করবেন। যদি তাই হয়, তাহলে ট্রেডাররা তার বক্তব্যকে গুরুত্ব না-ও দিতে পারে।
তবে সামান্য সম্ভাবনা রয়েছে যে, সাম্প্রতিক মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতির আলোকে পাওয়েল তুলনামূলকভাবে হকিশ বা কঠোর অবস্থান গ্রহণ করতে পারেন—বিশেষ করে যদি তিনি মনে করেন, তেলের দাম বাড়লে যুক্তরাষ্ট্রে মুদ্রাস্ফীতি আরও বেড়ে যেতে পারে।
তবুও পাওয়েল খুব দ্রুত কোনো সিদ্ধান্তে যাবেন না বলেই ধারণা করা যায়, বিশেষত যখন দিনের শেষভাগে তেলের দাম আবার কমেছে। উল্লেখযোগ্য যে, জুনের FOMC-এর বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল ইসরায়েল ইরানের উপর প্রথম হামলা চালানোর পর, কিন্তু তবুও ফেড সেই উত্তেজনাকে গুরুত্ব দেয়নি—যদিও তখন ট্রেডাররা তেলের দাম নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিল।
ICE তথ্য অনুযায়ী, আগস্টের ব্রেন্ট ফিউচারস গত ২৪ ঘণ্টায় ৫% এর বেশি হ্রাস পেয়ে ব্যারেলপ্রতি $74.88-এ নেমে এসেছে। এই পতনের পেছনে রয়েছে হরমুজ প্রণালী বন্ধ হওয়ার সম্ভাবনা হ্রাস পাওয়া। যদিও ইরানি পার্লামেন্ট হরমুজ প্রণালী বন্ধের প্রস্তাব পাস করেছে, তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত সুপ্রিম ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল থেকে আসবে।
এই মুহূর্তে হরমুজ প্রণালী খোলা রয়েছে, এবং কিছু বিশ্লেষক মনে করছেন, শেষ পর্যন্ত ইরান হরমুজ প্রণালী বন্ধ করবে না—কারণ এতে তারা নিজেরাই তেল রপ্তানি করতে পারবে না। এখন পর্যন্ত ইসরায়েল এবং যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলা তেলের অবকাঠামোতে আঘাত করেনি, তাই ইরান অপরিশোধিত তেল রপ্তানি চালিয়ে যেতে পারছে। পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন না হলে, হরমুজ প্রণালী খোলা থাকবে বলেই ধরে নেওয়া হচ্ছে।
এই প্রেক্ষাপটে, পাওয়েলের বক্তব্যে সম্ভবত জুনের FOMC-এর বৈঠকের মূল উপসংহারগুলোই পুনরায় আলোকপাত করা হবে:
- মূল্যস্ফীতি এখনও লক্ষ্যমাত্রার উপরে রয়েছে
- ফেড ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে প্রস্তুত
- শুল্ক প্রভাব এখনো অনিশ্চিত
- এই প্রভাব নির্ভর করবে চূড়ান্ত শুল্ক নির্ধারণের উপর (আলোচনা এখনও চলমান রয়েছে)
- বর্তমান শুল্ক নীতি মূল্যস্ফীতির বৃদ্ধি ঘটাতে পারে এবং অর্থনৈতিক কার্যক্রমে চাপ ফেলতে পারে
"অনিশ্চয়তা" শব্দটি পাওয়েলের বক্তব্যে বারবার উঠে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তবে যদি ফেডের চেয়ারম্যানের পূর্বনির্ধারিত বার্তা থেকে খুব বেশি বিচ্যুতি না ঘটে, তাহলে তার বক্তব্য মার্কেটে উল্লেখযোগ্য অস্থিরতা সৃষ্টি করবে না। বরং ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি মার্কেটের পরিস্থিতি নির্ধারণ করবে।
উদাহরণস্বরূপ, রয়টার্স জানিয়েছে, হোয়াইট হাউজ মনে করে ইরানের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বাহিনীর বিরুদ্ধে পাল্টা হামলার সম্ভাবনা "খুব বেশি।" নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মকর্তারা বলেছেন, আগামী এক-দুই দিনের মধ্যেই প্রতিক্রিয়া আসতে পারে, যদিও ওয়াশিংটন এখনো কূটনৈতিক সমাধান আশা করছে।
এই ঘটনাপ্রবাহের প্রেক্ষিতে কাতার "পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত" আকাশসীমা বন্ধ রেখেছে, আর যুক্তরাজ্যের ফরেন অফিস তাদের নাগরিকদের সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং কাতারে ভ্রমণ না করার পরামর্শ দিয়েছে।
মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা ফের বৃদ্ধি পেলে তা মার্কিন ডলারকে পরোক্ষভাবে সমর্থন করবে। তবে যদি ইরানি প্রতিক্রিয়া মূলত প্রতীকী হয় বা এতটাই সীমিত হয় যে ওয়াশিংটন সেটিকে উপেক্ষা করতে পারে—তাহলে ঝুঁকিপূর্ণ অ্যাসেটের প্রতি চাহিদা পুনরায় ফিরে আসতে পারে। এই পরিস্থিতিতে, EUR/USD-এর ক্রেতারা মার্কেটের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেতে পারে, এবং পেয়ারটির মূল্য 1.1550–1.1620 রেঞ্জে ফিরে যেতে পারে।