মাইকেল ইনট্রেটর ও তার অংশীদারগণ

কোরওয়েভ শুরু হয়েছিল একদল সাবেক ট্রেডারের ক্রিপ্টো-মাইনিং প্রকল্প হিসেবে, যারা বিপুল সংখ্যক এনভিডিয়া গ্রাফিক্স কার্ড কিনে ফেলেছিলেন। কিন্তু ২০১৯ সালে তারা দিক বদলে নিউরাল নেটওয়ার্কের জন্য ক্লাউড কম্পিউটিং সেবা দেওয়া শুরু করে। এআই এর জোয়ারের সুযোগে মার্কিন কোম্পানিটি দ্রুত বিনিয়োগ পায়, শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয় এবং এর প্রতিষ্ঠাতারা বিলিয়নিয়ার হয়ে ওঠেন। বর্তমানে কোরওয়েভের সিইও মাইকেল ইনট্রেটরের মোট $৩ বিলিয়নেরও বেশি সম্পদ রয়েছে। তার অংশীদার ব্রায়ান ভেন্টুরো, ব্র্যানিন ম্যাকবি এবং জ্যাক কোহেনের সম্পদ যথাক্রমে $২ বিলিয়ন, $১.৫ বিলিয়ন এবং $১.২ বিলিয়ন সম্পদ অর্জন করেছেন।

আলেকজান্ডার ওয়াং

মার্কিন উদ্যোক্তা আলেকজান্ডার ওয়াং হলেন বিশ্বের সবচেয়ে কনিষ্ঠ বিলিয়নিয়ার যিনি সম্পূর্ণভাবে নিজের যোগ্যতায় তার সকল সম্পদ অর্জন করেছেন। তার সম্পদের পরিমাণ এখন আনুমানিক $২ বিলিয়ন। কৈশোরে তিনি সিলিকন ভ্যালিতে ইঞ্জিনিয়ারিং ক্যারিয়ার শুরু করেন এবং নিজের প্রতিষ্ঠান স্কেল এআই-তে পুরোপুরি মনোযোগ দেওয়ার জন্য ১৯ বছর বয়সে এমআইটি-এর পড়াশোনা ছেড়ে দেন। বর্তমানে এই স্টার্টআপটি ওপেনএআই, গুগল এবং মেটার মতো প্রতিষ্ঠানকে ডেটা লেবেলিং সেবা দিয়ে এআই খাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

জো লনসডেল

মার্কিন উদ্যোক্তা এবং প্যালান্টির সহ-প্রতিষ্ঠাতা জো লনসডেল বৃহৎ আকারের ডেটা বিশ্লেষণে এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন সরকারি সংস্থা ও কর্পোরেট গ্রাহকদের সঙ্গে কাজ করছেন। কোম্পানিটি গোয়েন্দা বিভাগ, সাইবার সিকিউরিটি, লজিস্টিকস ও স্বাস্থ্যসেবার জন্য টুলস সরবরাহ করে থাকে। গত বছরে প্যালান্টির শেয়ারের মূল্যের ব্যাপক উত্থান লনসডেলের সম্পদের পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়েছে। বর্তমানে তার সম্পদের মূল্য $২ বিলিয়ন।

ফিল শ

মার্কিন ব্যবসায়ী ও ট্রান্সপারফেক্টের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ফিল শ’-এর মোট সম্পদের পরিমাণ এখন আনুমানিক $১.৮ বিলিয়ন। ১৯৯২ সালে নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির একটি ডর্ম রুম থেকে যাত্রা শুরু করা এই স্টার্টআপটি আজ একটি বৈশ্বিক ভাষা প্রযুক্তি কোম্পানিতে রূপান্তরিত হয়েছে। দীর্ঘ কর্পোরেট বিরোধের পর শ’ তার প্রাক্তন অংশীদারকে পাওয়া চুকিয়ে দিয়ে কোম্পানির একক মালিকানা পেয়েছেন। বর্তমানে ট্রান্সপারফেক্ট একটি হাই-টেক প্ল্যাটফর্ম, যা এআই-এর মাধ্যমে অনুবাদ, লোকালাইজেশন এবং ডেটা বিশ্লেষণ সম্পন্ন করে থাকে। তাদের গ্রাহকদের মধ্যে মাইক্রোসফট ও মার্কিন বিচার বিভাগ অন্যতম।

ইয়াও রুনহাও

চীনা উদ্যোক্তা ইয়াও রুনহাও $১.৩ বিলিয়ন সম্পদ নিয়ে রিলেশনশিপ সিমুলেশন গেমের মাধ্যমে এআই খাতের শীর্ষে উঠে এসেছেন । তার সাংহাই-ভিত্তিক গেমিং স্টুডিও পেপার গেমস ২০২৪ সালের শুরুর দিকে “লাভ অ্যান্ড ডিপস্পেস” নামে একটি এআই-চালিত ডেটিং সিমুলেটর চালু করে, যা ব্যাপক সাড়া ফেলে এবং এখন কোম্পানিটির ৮০%-এর বেশি আয় এনে দেয়। গেমটি এআই অ্যালগোরিদম ব্যবহার করে ভার্চুয়াল চরিত্রদের সঙ্গে পার্সোনালাইজড ইন্টারঅ্যাকশন তৈরি করে এবং মাসিক ভিত্তিতে এটির প্রায় ৬ মিলিয়ন সক্রিয় ব্যবহারকারী রয়েছে।

ডারিও অ্যামোডেই ও তার দল

ডারিও অ্যামোডেই এবং তার দল এআই খাতে গুরুত্বপূর্ণ নাম হয়ে উঠেছেন অ্যানথ্রোপিক উত্থানের মাধ্যমে—যেটি চ্যাটজিপিটির প্রতিদ্বন্দ্বী ক্লড তৈরি করেছে। ওপেনএআই-এর সাবেক কর্মীদের দ্বারা ২০২১ সালে প্রতিষ্ঠিত অ্যানথ্রোপিক ২০২৪ সালের মার্চে $৩.৫ বিলিয়ন বিনিয়োগ পায়, যার ফলে কোম্পানিটির বাজার মূলধন $৬১.৫ বিলিয়নে পৌঁছায় এবং এর সাতজন সহ-প্রতিষ্ঠাতা সবাই বিলিয়নিয়ার হয়ে ওঠেন। ডারিও এবং তার বোন ড্যানিয়েলা—দুজনেরই সম্পদ এখন $১.২ বিলিয়ন, একই পরিমাণ সম্পদ রয়েছে তাদের সহকর্মী টম ব্রাউন, জ্যাক ক্লার্ক, জ্যারেড ক্যাপলান, স্যাম ম্যাকক্যান্ডলিশ ও ক্রিস্টোফার ওলাহের।

লুইস ভন আহন ও সেভেরিন হ্যাকার

গুয়াতেমালার লুইস ভন আহন এবং সুইস উদ্যোক্তা সেভেরিন হ্যাকার বিলিয়নিয়ার হয়েছেন ডুয়োলিংগোর মাধ্যমে— যা এমন একটি শিক্ষামূলক প্ল্যাটফর্ম যেখানে এআই মুখ্য ভূমিকা রাখে। ২০১১ সালে প্রতিষ্ঠিত এই কোম্পানিটি “অ্যাডাপটিভ লার্নিং”-এর উপর ভিত্তি করে তৈরি: ব্যবহারকারীর আচরণ রিয়েল টাইমে বিশ্লেষণ করে, এআই-ই নির্ধারণ করে কার কী শেখা উচিত। ফলে ভাষা শেখা হয়ে উঠেছে আরও আকর্ষণীয় ও কার্যকর। বর্তমানে ডুয়োলিংগোর প্রতি মাসে ১০ কোটির বেশি সক্রিয় ব্যবহারকারী রয়েছে, যারা ৪০টিরও বেশি ভাষা শেখে। কোম্পানিটির দুইজনই প্রতিষ্ঠাতারই এখন আনুমানিক সম্পদের পরিমাণ $১.১ বিলিয়ন।

সুন্দর পিচাই

ভারতীয় বংশোদ্ভূত সুন্দর পিচাই এবারই প্রথম ফোর্বস বিলিয়নিয়ার তালিকায় প্রবেশ করেছেন, যা অ্যালফাবেট—অর্থাৎ গুগলের মূল কোম্পানির শেয়ারের মূল্যের দুর্দান্ত উত্থানের ফলে হয়েছে। ২০১৯ সাল থেকে গুগলের সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন পিচাই। যদিও তিনি কোম্পানিটির মাত্র ০.০২% মালিক, তবুও জেমিনি 2.0 এআই মডেল চালুর পর শেয়ারের মূল্যবৃদ্ধি এবং পুরনো স্টক অপশন ও শেয়ার বিক্রি মিলিয়ে তার সম্পদ এখন $১.১ বিলিয়নে পৌঁছেছে।

লিয়াং ওয়েনফেং

চীনা উদ্যোক্তা লিয়াং ওয়েনফেং, যিনি বর্তমানে $১ বিলিয়ন সম্পদের মালিক, ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে ডিপসিক মডেল চালুর পর এআই খাতে বিশ্বজুড়ে আলোচনায় আসেন। এই ল্যাঙ্গোয়েজ মডেল চ্যাটজিপিটির মানের কাছাকাছি হলেও খরচ অনেক কম। প্রকল্পটি স্বনির্ভরভাবে অর্থায়ন করা হয়েছিল, যার উৎস ছিল হাই-ফ্লায়ার ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্টের মুনাফা—এটি একটি কোয়ান্ট ফান্ড যা ২০১৫ সালে লিয়াং তার দুই সহপাঠীর সঙ্গে মিলে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।