সামনে জুলাই মাসের শেষ দিকের সপ্তাহ অপেক্ষা করছে। এ সপ্তাহের অর্থনৈতিক ক্যালেন্ডারে EUR/USD পেয়ারের ট্রেডারদের জন্য বড় কোনো ইভেন্টের আধিক্য নেই। মূল মনোযোগ থাকবে বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠেয় ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈঠকের ওপর। PMI এবং IFO সূচকগুলোর ফলাফলও আলোচনার কেন্দ্রে থাকবে। তাত্ত্বিকভাবে, মৌলিক প্রেক্ষাপটের প্রতি প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে ইউরোর ট্রেডিংয়ের পরিস্থিতি নির্ধারিত হওয়ার কথা, যেখানে ডলার পার্শ্ব চরিত্রে থাকবে। তবে, ক্যালেন্ডারভিত্তিক ইভেন্ট ছাড়াও এমন কিছু ইভেন্টের উপস্থিতি রয়েছে যা পূর্বানুমান করা কঠিন হলেও অনেক সময় ডলার পেয়ারের উপর বেশি প্রভাব ফেলে। সেই কারণে, EUR/USD পেয়ারের ক্ষেত্রে মার্কিন ডলারই মূল প্রবণতা নির্ধারণকারী ভূমিকা পালন করতে পারে।

শুল্কের বিষয়টি আবারো আলোচনায় উঠে এসেছে। ঘোষিত ১ আগস্টের সময়সীমা শেষ হতে মাত্র দুই সপ্তাহেরও কম সময় বাকি থাকায় মার্কেটে অনিশ্চয়তা বাড়তে পারে। ডোনাল্ড ট্রাম্প ইতোমধ্যেই জুলাইয়ের শুরুতে আলাদা আলাদা শুল্কহার ঘোষণা করেছেন এবং বলেছেন যে সার্বজনীয় 10% শুল্কহারের মেয়াদ আর বাড়ানো হবে না। ফলে, "আলোচনার ফলাফল" EUR/USD এবং অন্যান্য ডলার পেয়ারের ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলবে। যদি যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাপান, ভারত, কানাডা এবং দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি করতে সক্ষম হয়, তাহলে মার্কেটে ঝুঁকি গ্রহণের প্রবণতা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেতে পারে এবং EUR/USD পেয়ারের ক্রেতারা আবারও এই পেয়ারের মূল্যকে 1.17 এরিয়া টেস্ট করার দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে পারে।
তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে এরকম একটি ইতিবাচক পরিস্থিতির কোনো বাস্তবভিত্তিক সম্ভাবনা নেই। বরং, ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের তথ্য অনুযায়ী, ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে আলোচনায় নতুন কিছু দাবি পেশ করেছেন, যার মধ্যে ইউরোপীয় পণ্যের ওপর 15% থেকে 20% পর্যন্ত সর্বনিম্ন শুল্ক আরোপের প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। পাশাপাশি, তিনি ইউরোপীয় গাড়ির ওপর 25% শুল্ক বজায় রাখার দাবিও জানিয়েছেন।
যদি যুক্তরাষ্ট্র এসব চুক্তি চূড়ান্ত করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে EUR/USD পেয়ারের ওপর চাপ বেড়ে যেতে পারে, বিশেষ করে যখন মার্কেটে ঝুঁকি গ্রহণ না করার প্রবণতা জোরালো হবে।
ট্রেডাররা ফেডারেল রিজার্ভ সদর দপ্তরের সংস্কার নিয়ে চলমান বিতর্কের দিকেও নজর রাখবেন, যার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন ফেডের চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল। হোয়াইট হাউস বারবার দাবি করছে যে সংস্কারের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থের অপব্যবহার হচ্ছে (যদিও ঐ অর্থ ফেডের নিজস্ব বাজেট থেকে নেয়া হয়েছে, ফেডারেল বাজেট থেকে নয়), এবং কংগ্রেসের একজন প্রতিনিধি পাওয়েলের বিরুদ্ধে মিথ্যাচারের অভিযোগ তুলেছেন, যেখানে তিনি নাকি কংগ্রেসকে আশ্বস্ত করেছিলেন যে এই সংস্কারে কোনো বিলাসবহুল সুবিধা অন্তর্ভুক্ত থাকবে না।
যদি এই কেলেংকারি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা আরও বেড়ে যায় অথবা ট্রাম্প পাওয়েলের নতুন উত্তরসূরির ঘোষণা করেন (যদিও এটি অপ্রত্যাশিত, কিন্তু অসম্ভব নয়), তাহলে ফেডের স্বাধীনতা নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি হওয়ায় ডলারের ওপর অতিরিক্ত চাপ তৈরি হতে পারে।
এবার আসা যাক সামনের সপ্তাহের ক্যালেন্ডারভিত্তিক ইভেন্টগুলোর দিকে:
এ সপ্তাহের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইভেন্ট হচ্ছে জুলাই মাসের ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈঠক, যা বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই অনুষ্ঠিত হবে বলে নির্ধারিত রয়েছে। একদিকে, এই বৈঠকের ফলাফল প্রায় নিশ্চিত—রয়টার্সের এক জরিপ অনুযায়ী, অংশগ্রহণকারী ৮৪ জন শীর্ষস্থানীয় অর্থনীতিবিদের মতে, ইসিবি বর্তমান আর্থিক নীতিমালা অপরিবর্তিত রাখবে। বাণিজ্য নীতিতে চলমান অনিশ্চয়তা (বিশেষ করে যদি তখনো মার্কিন-ইইউ চুক্তি সম্পন্ন না হয়) বিবেচনায় রেখে, ইসিবি সম্ভবত সতর্ক অবস্থান গ্রহণ করবে এবং ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থান বজায় রাখবে। যদিও সুদের হার অপরিবর্তিত থাকবে, তবে যদি পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়, তাহলে ইসিবি বছরের শেষভাগে আরেক দফা আর্থিক নীতিমালার নমনীয়করণের ইঙ্গিত দিতে পারে।
ইসিবি শুধুমাত্র তখনই ইউরোকে সহায়তা করতে পারবে যদি তারা অপেক্ষাকৃত হকিশ—বা আরও নির্দিষ্টভাবে বললে, দৃঢ়ভাবে অপেক্ষা ও পর্যবেক্ষণের অবস্থান গ্রহণ করে। উদাহরণস্বরূপ, সম্প্রতি ইসাবেল স্নাবেল বলেছেন, নতুন করে সুদের হার হ্রাসের "সম্ভাবনা অনেক কম।" যদি ক্রিস্টিন লাগার্দের বক্তব্য এবং আলোচনার চূড়ান্ত ফলাফলে এই অবস্থান প্রতিফলিত হয়, তাহলে EUR/USD পেয়ারের ক্রেতারা ইউরোর শক্তিশালী হওয়ার বিষয়টি কাজে লাগিয়ে পাল্টা আক্রমণ শুরু করতে পারে।
এ সপ্তাহের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সামষ্টিক অর্থনৈতিক প্রতিবেদন হবে PMI এবং IFO সূচক। যদি PMI সূচকগুলোর ফলাফল বৃদ্ধি নির্দেশ করে ইতিবাচক মান প্রদর্শন করে, তাহলে এটি EUR/USD পেয়ারের উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে। প্রাথমিক পূর্বাভাস অনুযায়ী, জার্মানির ম্যানুফ্যাকচারিং বা উৎপাদন সংক্রান্ত PMI 49.4-এ পৌঁছাতে পারে (পূর্বে ছিল 49.0), এবং সার্ভিসেস বা পরিষেবা সংক্রান্ত PMI 50.2-এ পৌঁছাতে পারে (গত মাসে ছিল 49.7)। ইউরোজোনেও একই প্রবণতা প্রত্যাশিত: ম্যানুফ্যাকচারিং বা উৎপাদন সংক্রান্ত PMI 49.9 এবং সার্ভিসেস বা পরিষেবা সংক্রান্ত 50.9-এ পৌঁছাতে পারে। EUR/USD পেয়ারের ক্রেতাদের সুবিধাজনক অবস্থানের জন্য, বিশেষ করে ম্যানুফ্যাকচারিং বা উৎপাদন সংক্রান্ত PMI প্রতিবেদনের "ইতিবাচক ফলাফল" প্রদর্শন করতে হবে।
IFO সূচক, যা পরদিন (২৫ জুলাই) প্রকাশিত হবে, যদি PMI প্রত্যাশার চেয়ে ভালো আসে, তাহলে এটি সামষ্টিক অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটের প্রভাবকে আরও শক্তিশালী করবে। অধিকাংশ বিশ্লেষকের মতে, জার্মানির বিজনেস ক্লাইমেট সূচক 89.2-এ পৌঁছাতে পারে, যা গত বছরের জুলাইয়ের পর সর্বোচ্চ। এই সূচক গত ছয় মাস ধরে ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে এবং জুলাই সপ্তম মাস হতে পারে। IFO বিজনেস এক্সপেকটেশন সূচকও পূর্ববর্তী 88.4 থেকে 89.2-এ পৌঁছানোর পূর্বাভাস রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ম্যানুফ্যাকচারিং ও সার্ভিসেস PMI সূচকগুলোর দিকেও নজর রাখা উচিত। পূর্বাভাস অনুযায়ী, উভয় সূচক সামান্য হ্রাস পেতে পারে, তবে ইতিবাচক মানের ওপরে থাকবে। ডলারের ক্রেতাদের সুবিধাজনক অবস্থানের জন্য, এই সূচকগুলোকে অবশ্যই ৫০-পয়েন্টের ওপরে থাকতে হবে।
টেকনিক্যাল দৃষ্টিকোণ থেকে, EUR/USD পেয়ার বর্তমানে 1.1560 এবং 1.1650 এর মাঝামাঝি প্রায় ১০০-পয়েন্ট রেঞ্জের মধ্যে ট্রেড করছে এবং দুই প্রান্ত থেকেই মূল্যের রিবাউন্ড হচ্ছে। এই রেঞ্জের নিচের প্রান্ত H4 চার্টে বলিঞ্জার ব্যান্ডের নিচের লাইনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ, এবং ওপরের প্রান্ত বলিঞ্জার ব্যান্ডের ওপরের লাইনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। বর্তমানে কোনো স্পষ্ট বুলিশ বা বিয়ারিশ প্রবণতার সিগন্যাল নেই। H4 চার্টে, এই পেয়ারের মূল্য বলিঞ্জার ব্যান্ডের মিডলাইনে অবস্থান করছে, যা কুমো ক্লাউডের নিচে, এবং টেনকান-সেন ও কিজুন-সেন লাইনের মাঝে অবস্থিউত। দৈনিক (D1) চার্টে, এই পেয়ারের মূল্য বলিঞ্জার ব্যান্ডের মিডলাইন ও নিচের লাইনের মাঝখানে অবস্থান করছে, যা কুমো ক্লাউডের ওপরে, তবে টেনকান-সেন ও কিজুন-সেন লাইনের ঠিক ওপরেই রয়েছে।