মঙ্গলবারের ট্রেডের বিশ্লেষণ
EUR/USD পেয়ারের 1H চার্ট
মঙ্গলবার সামগ্রিকভাবে EUR/USD কারেন্সি পেয়ারের মূল্যের ঊর্ধ্বমুখী মুভমেন্ট অব্যাহত ছিল। এইবার মার্কেটের বিনিয়োগকারীরা ডোনাল্ড ট্রাম্পের সার্কাস প্রদর্শনীর সাক্ষী হয়েছে। মনে করিয়ে দিই, মঙ্গলবার সকালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ঘোষণা দেন যে ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যকার যুদ্ধ শেষ হয়েছে। অথচ মাত্র কয়েক ঘণ্টা পরেই তেহরান প্রতিপক্ষের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে, যা সাথে সাথেই পাল্টা হামলা ডেকে আনে। এই সময়জুড়ে—যখন জেরুজালেম ও তেহরান একে অপরকে গোলাবর্ষণ করছিল অথবা নতুন হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছিল—ট্রাম্প আবারও মধ্যস্থতা করার চেষ্টা করেন। এরপর তিনি নিজের সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে লেখেন, তিনি ইসরায়েল ও ইরান—উভয়ের ওপরই অত্যন্ত ক্ষুব্ধ।
দিনের শেষভাগে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ ঘোষণা দেয় যে ইরানের কাছ থেকে আর "পারমাণবিক হামলার" হুমকি নেই, আর ইরানি কর্তৃপক্ষ দাবি করে তারা ইসরায়েলের ওপর নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করেছে, যেখানে ইসরায়েল একতরফাভাবে সামরিক অভিযান বন্ধ করেছে। সবাই বিজয় দাবি করেছে, কেউ হারেনি, লক্ষ্য অর্জিত হয়েছে, ট্রাম্প হয়েছেন শান্তির দূত এবং এখন তিনি নোবেল পুরস্কার পেতে প্রস্তুত। সবাই খুশি, সবাই সন্তুষ্ট—শুধু মার্কিন ডলার ছাড়া, যা আবারও দরপতনের শিকার হচ্ছে, কারণ মার্কেটের ট্রেডাররা এত গুরুতর ও ভয়াবহ পরিস্থিতিকেও এখন যুক্তরাষ্ট্রের মঞ্চস্থ করা একটি প্রহসন হিসেবে দেখছে।
EUR/USD পেয়ারের 5M চার্ট
মঙ্গলবার 5-মিনিটের টাইমফ্রেমে পরিলক্ষিত এই পেয়ারের মূল্যের মুভমেন্ট খুব একটা আদর্শ ছিল না, যদিও দিনের শেষে ইউরোর দর বৃদ্ধি পায়। দিনজুড়ে গঠিত পাঁচটি সিগন্যালই 1.1609 লেভেলের আশেপাশে গঠিত হয়েছিল এবং এগুলোর প্রায় সবগুলোই ভুল সিগন্যাল ছিল। ফলে, নতুন ট্রেডাররা শুধুমাত্র পাউন্ডের ট্রেড করে লাভ করতে পারত, ইউরোর ক্ষেত্রে কেবল প্রথম দুইটি সিগন্যাল এক্সিকিউশন করা যেতে পারত—এবং সেগুলো থেকেও কোনো লাভ হয়নি।
বুধবারের ট্রেডিংয়ের কৌশল:
ঘণ্টাভিত্তিক টাইমফ্রেমে EUR/USD পেয়ারের মূল্যের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা অব্যাহত রয়েছে, যা ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বায়িত্ব নেয়ার পর থেকে শুরু হয়েছে এবং সম্ভবত পরবর্তী প্রেসিডেন্ট না আসা পর্যন্ত এই ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা অব্যাহত। মূলত, ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট এই বিষয়টিই ডলারের নিয়মিত দরপতনের জন্য যথেষ্ট। এমনকি ইরান-ইসরায়েল সংঘর্ষের বৃদ্ধিও ডলারের সার্বিক অবস্থানে খুব বেশি প্রভাব ফেলেনি, কারণ যুক্তরাষ্ট্র নিজেই এই সংঘর্ষের সক্রিয়ভাবে জড়িয়ে পড়েছে। তবে এখন যেহেতু যুদ্ধ শেষ, তাই ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা কমেছে, তেলের দরপতন হচ্ছে, এবং ট্রাম্প নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনীত হতে পারেন—তবে আবারও ডলারের দর বৃদ্ধির জন্য কোনো মৌলিক ভিত্তি নেই।
বুধবার EUR/USD পেয়ারের মূল্যের ঊর্ধ্বমুখী মুভমেন্ট অব্যাহত থাকতে পারে, কারণ ডিসেন্ডিং ট্রেন্ডলাইন ইতোমধ্যেই ব্রেক করা হয়েছে। গতকাল এই পেয়ারের মূল্য তিন বছরের মধ্যে নতুন সর্বোচ্চ লেভেলে পৌঁছেছে এবং 1.1609 এর গুরুত্বপূর্ণ লেভেল অতিক্রম করেছে।
5-মিনিট টাইমফ্রেমে ট্রেডিংয়ের জন্য প্রাসঙ্গিক লেভেলগুলো হলো: 1.1132–1.1140, 1.1198–1.1218, 1.1267–1.1292, 1.1354–1.1363, 1.1413, 1.1455–1.1474, 1.1527, 1.1561–1.1571, 1.1609, 1.1666, 1.1704, 1.1802।
বুধবারের গুরুত্বপূর্ণ ইভেন্টের মধ্যে কেবল কংগ্রেসের সামনে পাওয়েলের দ্বিতীয়দিনের বিবৃতি উল্লেখযোগ্য। যেহেতু তার প্রথম বক্তব্য থেকে কোনো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যায়নি, তাই দ্বিতীয় বক্তব্য থেকেও উল্লেখযোগ্য কিছু আসার সম্ভাবনা কম।
ট্রেডিং সিস্টেমের মূল নিয়মাবলী:
- সিগনালের শক্তি: যত দ্রুত একটি সিগন্যাল (রিবাউন্ড বা ব্রেকআউট) গঠিত হয়, সিগন্যালটিকে ততই শক্তিশালী হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
- ভুল সিগন্যাল: যদি কোনো লেভেলের কাছে দুই বা ততোধিক ভুল ট্রেডিং সিগনাল গঠিত হয়, তাহলে ঐ লেভেল থেকে প্রাপ্ত পরবর্তী সিগন্যালগুলোকে উপেক্ষা করা উচিত।
- ফ্ল্যাট মার্কেট: যখন মার্কেটে ফ্ল্যাট মুভমেন্ট দেখা যায়, তখন পেয়ারগুলোতে একাধিক ভুল সিগন্যাল গঠিত হতে পারে অথবা কোনো সিগন্যাল না-ও গঠিত হতে পারে। মার্কেটে ফ্ল্যাট মুভমেন্টের ইঙ্গিত পাওয়ামাত্র ট্রেডিং বন্ধ করে দেওয়াই ভালো।
- ট্রেডিংয়ের সময়সূচী: ইউরোপীয় সেশন শুরু থেকে মার্কিন সেশনের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত ট্রেড ওপেন করুন এবং এরপর সকল ট্রেড ম্যানুয়ালি ক্লোজ করে ফেলুন।
- MACD সিগন্যাল: ঘণ্টাভিত্তিক টাইমফ্রেমে কেবল সেই MACD সিগন্যালগুলোর ওপর ভিত্তি করে ট্রেড করুন, যেগুলো উচ্চ মাত্রার অস্থিরতা এবং ট্রেন্ডলাইন বা ট্রেন্ড চ্যানেলের মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া প্রবণতা হিসেবে বিবেচিত।
- নিকটতম লেভেল: যদি দুটি লেভেল খুব কাছাকাছি (৫–২০ পিপসের মধ্যে) অবস্থিত হয়, তাহলে সেগুলোকে সাপোর্ট বা রেজিস্ট্যান্স জোন হিসেবে বিবেচনা করুন।
- স্টপ লস: মূল্য কাঙ্ক্ষিত দিকের দিকে ১৫ পিপস মুভমেন্ট প্রদর্শন করলে, ব্রেকইভেনে স্টপ লস সেট করুন। এতে করে ভুল সিগন্যালের কারণে লোকসানের ঝুঁকি কমে আসে।
চার্টের মূল উপাদান:
সাপোর্ট ও রেজিস্ট্যান্স লেভেল: এই লেভেলগুলো পজিশন ওপেন বা ক্লোজ করার ক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রা হিসেবে ব্যবহৃত হয় এবং টেক প্রফিট সেট করার ক্ষেত্রেও উপযোগী।
লাল লাইনসমূহ: চ্যানেল বা ট্রেন্ডলাইন, যা বর্তমান প্রবণতা এবং ট্রেডের সম্ভাব্য দিকনির্দেশনা প্রদান করে।
MACD ইনডিকেটর (14,22,3): হিস্টোগ্রাম এবং সিগন্যাল লাইন বিশ্লেষণের জন্য একটি অতিরিক্ত ট্রেডিং সিগন্যালের উৎস হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
গুরুত্বপূর্ণ ইভেন্ট ও প্রতিবেদন: এই তথ্যগুলো অর্থনৈতিক ক্যালেন্ডারে পাওয়া যায় এবং মূল্যের মুভমেন্টে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে। গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদন প্রকাশের সময় সতর্কতা অবলম্বন করুন বা মার্কেট থেকে বেরিয়ে আসুন, যাতে হঠাৎ করে মূল্যের রিভার্সাল বা বিপরীতমুখী হওয়ার প্রবণতা এড়ানো যায়।
ফরেক্স ট্রেডিংয়ে নতুন ট্রেডারদের মনে রাখতে হবে প্রতিটি ট্রেড লাভজনক হবে না। দীর্ঘমেয়াদে ট্রেডিংয়ে সফলতা অর্জনের জন্য একটি সুস্পষ্ট কৌশল গ্রহণ এবং সঠিক মানি ম্যানেজমেন্ট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
