সামষ্টিক অর্থনৈতিক প্রতিবেদনের বিশ্লেষণ:
শুক্রবার একাধিক সামষ্টিক অর্থনৈতিক প্রতিবেদন প্রকাশের কথা রয়েছে, তবে এর মধ্যে কোনো প্রতিবেদনকেই বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে না। জার্মানিতে মে মাসের মুদ্রাস্ফীতি প্রতিবেদন প্রকাশিত হবে, যেখানে মুদ্রাস্ফীতির হার কমে ২% হওয়ার প্রত্যাশা করা হচ্ছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নে প্রতিবার মুদ্রাস্ফীতি কমার সাথে সাথে ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের (ECB) মুদ্রানীতির আরও নমনীয় হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। তবে, এই পদক্ষেপ বর্তমানে ইউরোর ওপর কোনো প্রভাব ফেলছে না, কারণ মার্কেটের ট্রেডাররা পুরোপুরিভাবে বৈশ্বিক বাণিজ্য যুদ্ধ সংক্রান্ত ইস্যুর উপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত রেখেছে। এর পাশাপাশি, জার্মানিতে স্বল্প গুরুত্বপূর্ণ খুচরা বিক্রয় প্রতিবেদনও প্রকাশিত হবে।
যুক্তরাষ্ট্রেও আজ তিনটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হবে, তবে এর কোনোটিই মার্কেটে ওপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলবে বলে মনে হচ্ছে। এই তিনটি প্রতিবেদন হলো: PCE প্রাইস ইনডেক্স, ইউনিভার্সিটি অব মিশিগান কনজ্যুমার সেন্টিমেন্ট ইনডেক্স, এবং ব্যক্তিগত আয় ও ব্যয় সংক্রান্ত প্রতিবেদন। আমরা আশা করছি না যে এই প্রতিবেদনগুলো মার্কেটে উল্লেখযোগ্য কোনো প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে।
ফান্ডামেন্টাল ইভেন্টের বিশ্লেষণ:
শুক্রবারের ফান্ডামেন্টাল ইভেন্টের মধ্যে ফেডারেল রিজার্ভের প্রতিনিধি—অস্টেন গুল্সবি, রাফায়েল বস্টিক এবং লরি লোগানের—বক্তব্যগুলোর কথা উল্লেখ করা যায়। তবে পূর্বে যেমনটি বলা হয়েছে, বর্তমানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর কর্মকর্তাদের বক্তব্য মার্কেটে প্রভাবিত করছে না, কারণ কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর নীতিমালা সংক্রান্ত অবস্থান ও দৃষ্টিভঙ্গি ইতিমধ্যেই ট্রেডারদের কাছে শতভাগ স্পষ্ট। ট্রেডাররা এখন শুধুমাত্র "ট্রাম্প ফ্যাক্টর"-কে কেন্দ্র করেই ট্রেড করছে, যা গতকালের সেশনে আবারও প্রমাণিত হয়েছে। তাছাড়া, সম্প্রতি ফেডের বহু কর্মকর্তা ইতোমধ্যে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করেছেন। সংক্ষেপে, তারা মনে করছেন যে ট্রাম্পের শুল্কনীতির পূর্ণ প্রভাব অর্থনৈতিক সূচকে প্রতিফলিত হতে কিছুটা সময় লাগবে।
আমাদের বিশ্বাস, ট্রেডাররা এখনো শুধুমাত্র বাণিজ্য যুদ্ধ নিয়ে উদ্বিগ্ন, যার উত্তেজনার মাত্রা ধীরে ধীরে কমছে ঠিকই, কিন্তু এখনো সম্পূর্ণভাবে শেষ হয়নি। যদি বেশিরভাগ দেশের সাথে বাণিজ্য চুক্তি না হয় কিংবা আলোচনাগুলো দীর্ঘায়িত হয়, তাহলে ডলারের দরপতন অব্যাহত থাকতে পারে। এমনকি ট্রাম্প নতুন করে শুল্ক আরোপ না করলেও, মার্কেটের ট্রেডারদের মধ্যে ট্রাম্প এবং তার গৃহীত নীতিমালার প্রতি চরম নেতিবাচক মনোভাবের কারণে ডলার দরপতনের শিকার হতে পারে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য আদালত ট্রাম্পের শুল্ক বাতিল করার রায় দিলেও, সন্ধ্যার মধ্যেই তারা সেই রায় স্থগিত করে দেয়।
উপসংহার:
সপ্তাহের শেষ ট্রেডিং দিনে, উভয় কারেন্সি পেয়ার (EUR/USD এবং GBP/USD) আবারও দক্ষিণমুখী মুভমেন্ট শুরু করতে পারে, কারণ এটি একটি টেকনিক্যাল কারেকশনের সময় বলে মনে হচ্ছে। একই সাথে, দীর্ঘমেয়াদি ডলার র্যালির জন্য কোনো শক্তিশালী কারণ আমরা দেখতে পাচ্ছি না। সম্ভবত এই মুহূর্তে উভয় পেয়ারের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা শেষ হয়ে গেছে, কারণ নতুন করে বাণিজ্য যুদ্ধের কোনো বিস্তার দেখা যাচ্ছে না। তবে, পাশাপাশি কোনো সত্যিকারের ডি-এসকেলেশন বা উত্তেজনা হ্রাসেরও স্পষ্ট ইঙ্গিত নেই। তাই বর্তমান পরিস্থিতিতে ট্রেডিংয়ের ভিত্তি হওয়া উচিত টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ।
ট্রেডিং সিস্টেমের মূল নিয়মাবলী:
- সিগনালের শক্তি: যত দ্রুত একটি সিগন্যাল (রিবাউন্ড বা ব্রেকআউট) গঠিত হয়, সিগন্যালটিকে ততই শক্তিশালী হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
- ভুল সিগন্যাল: যদি কোনো লেভেলের কাছে দুই বা ততোধিক ভুল ট্রেডিং সিগনাল গঠিত হয়, তাহলে ঐ লেভেল থেকে প্রাপ্ত পরবর্তী সিগন্যালগুলোকে উপেক্ষা করা উচিত।
- ফ্ল্যাট মার্কেট: যখন মার্কেটে ফ্ল্যাট মুভমেন্ট দেখা যায়, তখন পেয়ারগুলোতে একাধিক ভুল সিগন্যাল গঠিত হতে পারে অথবা কোনো সিগন্যাল না-ও গঠিত হতে পারে। মার্কেটে ফ্ল্যাট মুভমেন্টের ইঙ্গিত পাওয়ামাত্র ট্রেডিং বন্ধ করে দেওয়াই ভালো।
- ট্রেডিংয়ের সময়সূচী: ইউরোপীয় সেশন শুরু থেকে মার্কিন সেশনের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত ট্রেড ওপেন করুন এবং এরপর সকল ট্রেড ম্যানুয়ালি ক্লোজ করে ফেলুন।
- MACD সিগন্যাল: ঘণ্টাভিত্তিক টাইমফ্রেমে কেবল সেই MACD সিগন্যালগুলোর ওপর ভিত্তি করে ট্রেড করুন, যেগুলো উচ্চ মাত্রার অস্থিরতা এবং ট্রেন্ডলাইন বা ট্রেন্ড চ্যানেলের মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া প্রবণতা হিসেবে বিবেচিত।
- নিকটতম লেভেল: যদি দুটি লেভেল খুব কাছাকাছি (৫–২০ পিপসের মধ্যে) অবস্থিত হয়, তাহলে সেগুলোকে সাপোর্ট বা রেজিস্ট্যান্স জোন হিসেবে বিবেচনা করুন।
- স্টপ লস: মূল্য কাঙ্ক্ষিত দিকের দিকে ১৫ পিপস মুভমেন্ট প্রদর্শন করলে, ব্রেকইভেনে স্টপ লস সেট করুন। এতে করে ভুল সিগন্যালের কারণে লোকসানের ঝুঁকি কমে আসে।
চার্টের মূল উপাদান:
সাপোর্ট ও রেজিস্ট্যান্স লেভেল: এই লেভেলগুলো পজিশন ওপেন বা ক্লোজ করার ক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রা হিসেবে কাজ করে এবং টেক প্রফিট সেট করার ক্ষেত্রেও উপযোগী।
লাল লাইনসমূহ: চ্যানেল বা ট্রেন্ডলাইন, যা বর্তমান প্রবণতা এবং ট্রেডের সম্ভাব্য দিকনির্দেশনা প্রদান করে।
MACD ইনডিকেটর (14,22,3): হিস্টোগ্রাম এবং সিগন্যাল লাইন বিশ্লেষণের জন্য একটি অতিরিক্ত ট্রেডিং সিগন্যালের উৎস হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
গুরুত্বপূর্ণ ইভেন্ট ও প্রতিবেদন: এই তথ্যগুলো অর্থনৈতিক ক্যালেন্ডারে পাওয়া যায় এবং মূল্যের মুভমেন্টে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে। গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদন প্রকাশের সময় সতর্কতা অবলম্বন করুন বা মার্কেট থেকে বেরিয়ে আসুন, যাতে হঠাৎ করে মূল্যের রিভার্সাল বা বিপরীতমুখী হওয়ার প্রবণতা এড়ানো যায়।
ফরেক্স ট্রেডিংয়ে নতুন ট্রেডারদের মনে রাখতে হবে প্রতিটি ট্রেড লাভজনক হবে না। দীর্ঘমেয়াদে ট্রেডিংয়ে সফলতা অর্জনের জন্য একটি সুস্পষ্ট কৌশল গ্রহণ এবং সঠিক মানি ম্যানেজমেন্ট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।